December 28, 2024, 11:24 pm

পুনরুদ্ধার চায় বিএনপি সিরাজগঞ্জ- ৫ আসন ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ

মোঃ আব্দুল্লাহ আল শামীম সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ

তাঁত শিল্পে প্রসিদ্ধ বেলকুচি, এনায়েতপুর ও চৌহালী উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-৫ আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যে নড়েচড়ে বসেছেন এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অবশ্য এদিক থেকে আওয়ামী লীগ অনেকটাই এগিয়ে। যমুনার কোলঘেঁষা গঠিত সিরাজগঞ্জ-৫ আসনটি জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে জোট-মহাজোট উভয়ের কাছেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি রয়েছে অস্তিত্ব সংকটে। মামলার কারণে জামায়াত-বিএনপিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তেমন অংশ নিতে দেখা যায় না।  এমনকি কেন্দ্রের দেয়া কর্মসূচি পালনেও তাদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়ে না। তবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি চলছে তাদের। এই আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। সিরাজগঞ্জ-৫ আসনটি বেলকুচি কেন্দ্রিক রাজনীতিতে আবর্তিত। কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে বেলকুচি উপজেলার রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৭৫ সালের পর প্রথমবার ’৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস জয়লাভ করেন। ২০০১ সালে বিএনপি প্রার্থী সাবেক বিচারপতি মোজাম্মেল হকের কাছে বিপুল ভোটে লতিফ বিশ্বাস পরাজিত হন।  ১/১১ পরবর্তী নির্বাচনে সীমানা নির্ধারণ হলে চৌহালী উপজেলা বেলকুচি উপজেলার সঙ্গে যোগ হয় এবং সেই সঙ্গে বদলে যায় ভোটের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ থেকে আবারও প্রার্থী হন আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ বিশ্বাস এবং পরাজিত করেন বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদেরকে। লতিফ বিশ্বাস ২০০৮ সালে জয়লাভের পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। মন্ত্রী হয়ে দলীয় যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও নিজের সহধর্মিণীকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং বিএনপিপন্থি মফিজ উদ্দিন লাল খানকে বেলকুচি পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত করেন। মন্ত্রী হয়ে উন্নয়ন করলেও মন্ত্রীত্বের প্রভাব, দলীয় নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করা, বেপরোয়া আচরণসহ নানা অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন তিনি। মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও সাংগঠনিক দক্ষতা এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বিবেচনায় তাকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও পরবর্তীকালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয় এবং তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আবারও দলীয় যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে নিজের সহধর্মিণীকে বেলকুচি পৌরসভার মেয়র এবং রাজনীতিতে নবীন নিজ পুত্রকে ইউপি চেয়ারম্যান করায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিয়োগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনে লতিফ বিশ্বাস মনোনয়ন বঞ্চিত হন। মনোনয়ন পান ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ মণ্ডল। মজিদ মণ্ডল ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভ করলে তার দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেলকুচিতে গ্যাস সংযোগ, রাস্তা-ঘাট স্কুল-কলেজের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এমন আশা সাধারণ জনগণের মাঝে দানা বেঁধে ওঠে। কিন্তু ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে দলীয় কর্মকাণ্ডে তিনি তেমন সময় দিতে পারছেন না। লতিফ বিশ্বাসের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি দুজনই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তারা উভয়েই এলাকায় গণসংযোগ করছেন। মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে বর্তমান এমপি পুত্র ও এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মণ্ডল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্দুল মোমিন মণ্ডলের নামও আলোচনায় রয়েছেন। শরীর সুস্থ থাকলে এমপি মজিদ মণ্ডল প্রার্থী হবেন। কোনো কারণে তিনি অপারগ হলে তার পুত্র মোমিন মণ্ডলকে প্রার্থী করার জন্য তার চেষ্টা-তদবিরের অন্ত নেই। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তার পুত্রকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীরাও দুভাগে বিভক্ত। যার ফলে মামলার ঘটনাও ঘটে এবং এমপিপন্থি যুবলীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার হন। এনিয়ে উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে। এ দুজন ছাড়াও সাবেক ছাত্রনেতা ঢাকা মহানগরের বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী মীর মোশাররফ হোসেন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ লক্ষ্যে তিনি নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ করছেন। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। কোন পক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব না থাকায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে তাকে নিয়ে রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ। তরুণ ভোটারদের মাঝেও তার গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে তুঙ্গে। অপরদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীমের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। অপেক্ষাকৃত তরুণ এই ছাত্রনেতার ক্লিন ইমেজের কারণে এলাকার জনগণ ও নিজ দলে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন নিয়মিত। আমীরুল ইসলাম খান আলীম ছাড়াও জেলা বিএনপির সহসভাপতি রকিবুল আলম খান পাপ্পু রয়েছেন আলোচনায়। তিনিও জনসংযোগ করছেন। পোস্টার ব্যানার ছাপিয়েছেন। এছাড়া বিশিষ্ট শিল্পপতি গোলাম মাওলা বাবলু খান মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে শোনা যাচ্ছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির কাছে আসনটি দাবি করেছিল। কিন্তু বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থী মেজর (অব.) মঞ্জর কাদের জামায়তের সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নির্বাচনী আসন পাবনার সাঁথিয়া থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে জামায়াত বিএনপি প্রার্থীকে এ আসনটি ছেড়ে দেয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজামীর ফাঁসি হওয়ায় মঞ্জর কাদের সাঁথিয়া থেকে নির্বাচন করতে পারেন এমন সম্ভাবনায় জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে জামায়াত বিএনপির কাছে আসনটি দাবি করতে পারে। সেক্ষেত্রে জামায়াতের মজলিসের সুরা সদস্য সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আলী আলম প্রার্থী হতে পারেন। এমনটি না হলেও অধ্যক্ষ আলী আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকলে এ আসনটি দাবি করতে পারে।

 

 

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২০মার্চ২০১৮/ইকবাল

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর